New best 5 Short Story for Kids
1. রাক্ষস ও বাজ পাখির গল্প
হঠাৎ করেই বনের পাখিদের মধ্যে হুলস্থুল শুরু হয়ে গেলো। একটি বাজপাখি এই গন্ডগোলের কারণ। এটি যেন পাখি নয়, যেন রাক্ষস! সারাদিন শুধু খাই খাই। হাঁস খাবে, মুরগি খাবে, চড়ুই খাবে, টিয়া খাবে- খেতে বাজ পাখিটির কোন ক্লান্তি নেই। কিছুতেই পেট ভরে না ওর।
বাজপাখিটির সকালের নাস্তায় ছোট-বড় মিলে দশ থেকে বারোটি পাখি লাগে। দুপুরের খাবারের জন্য পনের থেকে বিশটি, আর রাতে এর কম হলে চলে না। এ ছাড়াও সারাদিন সময়-সুযোগ পেলেই টিয়া, ময়না, চড়ুই, টুনটুনি আর বুলবুলি মিলে আট থেকে দশটি পাখি শিকার না করলে মনে হয় সারাদিন কিছুই খায়নি ও।
এভাবে প্রতিদিন প্রায় পঞ্চাশটি পাখি বাজপাখিটির পেটে যায়। এতে বন থেকে পাখির সংখ্যা দ্রুত কমে যেতে লাগলো। অনেক পাখি আবার ভয়ে অন্য বনে গিয়ে আশ্রয় নিলো। বনে অলস দুপুরে আগের মতো আর ঘুঘু ডাকে না, দোয়েল গান গায় না, কোকিল কুহু কুহু করে বসন্তের বার্তা শোনায় না। শ্যামা, ফিঙ্গেরা নাচ ভুলে গেছে। গোটা বন জুড়ে অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছে।
রাক্ষস বাজপাখিটির অত্যাচারে সবচেয়ে ছোট পাখিগুলোর বিপদ বেশি। ওরা সহজেই বাজপাখিটির শিকারে পরিণত হয়। এতে বড় পাখিদের সমস্যাও কম হয়নি। বিশেষ করে চিলের অবস্থা খুবই খারাপ। এতোদিন ওরা ছোট ছোট পাখি, ইঁদুর শিকার করে খেতো। এখন বাজপাখিটির অত্যাচারে ওদের ভাগ্যে আর শিকার মেলে না। না খেয়ে থাকতে হয় ওদের।
বাজপাখিটির অত্যাচারে অতীষ্ঠ হয়ে বনের পাখিরা একদিন মিটিং করার দিনক্ষণ ঠিক করলো। কথাটা বাজপাখির কানে গেলে রেগে গেলো বাজপাখি। সারা বন ঘুরে প্রচার করলো মিটিং করতে হলে ওর অনুমতি লাগবে। আর যদি অনুমতি ছাড়া মিটিং করা হয়, তাহলে যারা মিটিং যাবে, তাদের কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
বিষয়টি নিয়ে চিহ্নিত হয়ে পড়লো সব পাখি। ঘুঘু, টিয়া, ময়না, হলুদ পাখি, কাঠঠোকরা বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ করার চিন্তা করলো। একদিন গোপনে ওরা আলোচনায় বসলো।
ঘুঘু বলল, ‘বিষয়টি নিয়ে পেঁচার সঙ্গে আলাপ করলে কেমন হয়?’
টিয়া বলল, ‘আর দূর পেঁচার আবার বুদ্ধি! ওকে দিয়ে কিছুই হবে না।’
হলুদ পাখি বলল, ‘তাহলে চিলের সঙ্গে বুদ্ধি করা যেতে পারে।’
টুনটুনি বলল, ‘চিল আমাদের চিরশত্রু। ওর কাছেও যাওয়া যাবে না। যাকেই পাবে, তাকেই গিলে খাবে।’
তাহলে কী করা যায়? এ নিয়ে খুব চিন্তিত হয়ে পড়লো সবাই। একটি দাঁড়কাক দূরে দাঁড়িয়েছিল। আস্তে আস্তে কাকটি ওদের কাছে এগিয়ে আসলো। ওকে আসতে দেখে সবাই উড়ে চলে যেতে লাগলো। দাঁড়কাকটি বলল, ‘তোমরা ভয় পেয়ো না, আমিও তোমাদের সঙ্গে আছি। এ ব্যাপারে আমি একটি কথা বলতে চাই।’
দাঁড়কাকের কথা শুনে পাখিগুলো একটু থামলো। দূর থেকে ময়না বলল, ‘তুমি কাছে না এসে দূর থেকে বলো কী বলতে চাও।’
দাঁড়কাক দুরে দাঁড়িয়ে বলল, ‘তোমরা আমাকে যদি ভয় পাও তো দূরেই থাকলাম। তবে আমার কথা মন দিয়ে শোন। কাজে লাগবে।’
টুনটুনি বলল, ‘কী বুদ্ধি দেবে তুমি! তুমিওতো সুযোগ পেলেই আমাদের মেরে খেয়ে ফেলো।’
হলুদ পাখি বিরক্ত হয়ে বলল, ‘আহ থামো তো! আগে শুনি না, কী বলতে চায় দাঁড়কাক।’
টুনটুনি বিরক্ত হয়ে বলল, ‘ঠিক আছে দাঁড়কাক, তোমার কী বুদ্ধি বলো। আমরা কীভাবে রেহাই পেতে পারি পাজি বাজপাখিটার হাত থেকে?’
দাঁড়কাকটি বলল, ‘আমার কোন বুদ্ধি নেই। তবে পাতিকাক আমার চেয়ে অনেক বুদ্ধিমান। ওকে নিয়ে একটা পরামর্শ করো তোমরা।’
দাঁড়কাকের কথা পছন্দ হলো সবার। কিন্তু সমস্যা হলো পাখিদের মিটিং করা নিয়ে। মিটিংয়ের কথা বাজপাখি যদি জানতে পারে তাহলে কেউ আর রেহাই পাবে না। এ ব্যাপারে পাতিকাকের সঙ্গে আলাপ করা হলো। পাতিকাক বলল, ‘আমি বুদ্ধি করে বাজপাখিটিকে কয়েক দিনের জন্য বনের বাইরে পাঠিয়ে দেবো। তখন সবাই মিলে মিটিং করা যাবে।’
দোয়েল বলল, সত্যি পারবে বাজপাখিটাকে বনের বাইরে পাঠিয়ে দিতে?
ময়না বলল, পারবে তো?’
পাতিকাক একটু মুচকি হাসলো। তারপর ঠোঁট দিয়ে ডানা খুঁটে গা ঝারা দিয়ে পরিপাটি হয়ে বলল, ‘তোমরা আমাকে কী মনে করো অ্যাঁ! সবাই আমাকে বেশি বুদ্ধিমান বলে কি এমনি এমনি! মানুষ অবশ্য আমার সঙ্গে একটু রসিকতা করে। ওরা বলে, ‘কাকের বুদ্ধি বেশি খায়….’। থাক- থাক, ওটা আর নাই বললাম।
টুনটুনি কাকের কথা শুনে খিল খিল করে হেসে উঠলো। ওকে ধমকে দিলো বাবুই। টুনটুনি বাবুই পাখির ধমকে রেগে গেলো। ঝগড়াঝাটি শুরু করে দিলো দু’জনে।
শ্যামা এতোক্ষণ চুপচাপ বসেছিল। পেয়ারা গাছটার উঁচু ডালটা থেকে নাচতে নাচতে একেবারে মাটিতে এসে পড়লো। বলল, ‘টুনটুনি, বাবুই তোমরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া থামাও। নিজেরা যদি ঝগড়া করো তো বাজপাখিটাকে কিছুতেই শায়েস্তা করতে পারবে না।’
সবাই শ্যামার কথায় সম্মৃতি দিয়ে বলল, ‘ঠিক বলেছো শ্যামা। এখন আমাদেও ঝগড়াঝাটি করার সময় নয়।’
পাতিকাক বলল, ‘তাহলে আমি এখন বাজপাখির কাছে যাই। কী বলো?’
ধ্যানী পাখির মাছরাঙার ধ্যান যেন ভাঙলো এতোক্ষণে। বিজ্ঞের মতো মাথা নাড়ালো মাছরাঙ্গা পাখি। বলল, দেরি করছো কেন? কোন কাজই ফেলে রাখতে নেই। যা করার দ্রুত করা উচিত।
দেরী না করে পাতিকাক চলে গেলো বাজ পার্খির কাছে।
একটা কড়ই গাছের মগডালে বসে ঝিমুচ্ছিল বাজপাখিটি। পাতিকাক হঠাৎ গিয়ে ওর পাশে বসতেই বাজপাখিটি ক্ষেপে গেলো। বলল, ‘তুই আবার বিরক্ত করতে আসলি কেন? যা, যা, দূরে সরে বস।’
পাতিকাক বলল, ‘কেন দূরে বসবো কেন?’
বাজ পাখি মুখ বাঁকা করে বলল, ‘দূরে কেন বসবি তাও জানো না! তুই তো দুনিয়ার সব পচা খাবার খাস। তোর গা থেকে গন্ধ আসে। তোর গায়ের গন্ধ পেলে আমার বমি আসে। ওয়াক-ওয়াক।’
বাজপাখিটি সত্যিই বমি করে দিলো।
বাজপাখি বমি করা দেখে খুশি হলো পাতিকাক।
বাজপাখি বলল, ‘দিলি তো আবার আমার ক্ষুধা লাগিয়ে। এখন কি খাই? তোকেও তো খাওয়া যাবে না। ইস কি বিচ্ছিরি গন্ধ তোর গায়ে!’
পাতিকাক মুখ কালো করে বলল, ‘খাবারের কথা পরে চিন্তা করো বাজপাখি ভাই। তোমার জন্য একটা খারাপ খবর আছে।’
খারাপ খবরের কথা শুনে আঁৎকে উঠলো বাজপাখি। বল না কী এমন খারাপ খবর?’
পাতিকাক বলল, ‘তুমি তো বাড়ির সবাইকে অন্য বনে রেখে এই বনে এসেছো শিকারের জন্য। তুমি কি জানো তোমার বুড়ো মা না খেয়ে অসুখ বাধিয়ে বসেছেন। মনে হয় বাঁচবেই না!’
বাজপাখি বলল, ‘কী বলছিস তুই! সত্যিই মা খুব অসুস্থ? কার কাছে খবর পেলি?’
কাক বলল, ‘কার কাছে আবার? আমার মামা বাড়ি তো তোমাদের বনে। কালই তো আমি তোমাদের ওখান থেকে এসেছি। নিজের চোখে দেখে এসেছি, তোমার মা অসুস্থ।
বাজপাখি কান্না শুরু কওে দিলো। ‘হায় হায় কী বলছিস তুই! মা বাঁচবো তো!’
পাতিকাক বলর, ‘কি জানি। নাও বাঁচতে পারেন। বুড়ো মানুষ। বয়স হয়েছে তো!’
তাহলে এখনই যাই। কি বলো? কিন্তু কীভাবে এতোটা পথ যাবো। পেটে দারুণ ক্ষুধা। এখন যে শিকার ধরবো তারও উপায় নেই।’
কাক বলল, ‘আমাকেই না হয় খেয়ে নাও। আমি তো তোমার সামনেই আছি।’
বাজপাখি ধমক দিয়ে বলল, ‘থাম তো তুই! তোকে খাবো আমি? না খেয়ে মরে গেলেও না। তোর গায়ে যা গন্ধ। ওয়াক।’
পাতিকাক বলল।‘তাহলে কী আর করবা, না খেয়েই যাও। দেখো মাকে শেষ দেখা দেখতে পারো কিনা।’
বাজপাখি ধমক দিলো পাতিকাককে। বলল, ‘আমি এখুনি যাচ্ছি। চার-পাঁচদিন আসতে পারবো না। মায়ের কাছে থাকবো। তাহলে এখুনি যাই, কী বলো?’
‘যাও যাও তাড়াতাড়ি যাও।’ পাতিকাক বলল।
বাজপাখি উড়ে চলে গেলো ওর অসুস্থ মাকে দেখতো। পাতিকাক আর দেরি না করে সবাইকে বাজপাখির চলে যাওয়ার কথা জানালো। বিকেলে সব পাখিরা মিটিংয়ে বসলো। মিটিংয়ে পাখিরা মিলে স্লোগান দিলো, ‘বাজপাখি নিপাত যাক/ পাখিরা সব রক্ষা পাক’।
মিটিংয়ে অনেক পাখিই বক্তৃতা করলো। কিন্তু কীভাবে বাজপাখিকে শায়েস্তা করা যায় তা বলতে পারলো না কেউ। চিল অনেক দূর থেকে ওদের কথা শুনছিল। কিন্তু কাছে আসতে সাহস পাচ্ছিল না। দূর থেকে বলল, ‘আমার কাছে একটা বুদ্ধি আছে?’
সবাই ভয়ে পেয়ে গেলো। কাঠঠোকরা বলল ‘পালাও, পালাও, চিল এসেছে।’
পাতিকাক বলল, ‘কেউ পালাবে না। একা চিল আমাদের কিছুই করতে পারবে না। আমরা সবাই যদি একত্রে থাকি, কেউ আমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। একটা কথা মনে রেখো তোমরা, একতাই বল।’
পাতিকাকের কথায় সবাই আশ্বস্ত হলো। এবার চিলকে পাতিকাক বলল, তুমি কাছে এসে তোমার কী বুদ্ধি আছে বলো। মনে রাখবা, চালাকি করার চেষ্টা করলে সবাই মিলে তোমাকে খতম করতে সময় লাগবে না।’
চিল বলল, ‘না ভাই, আমাকে তোমারা বিশ্বাস করতে পারো। তোমাদের বিপদ আর আমার বিপদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এই দেখো না, কাল আমার দু’টি ছানা ওই বাজপাখি খেয়ে ফেলেছে। আমিও খুব ভয়ে ভয়ে আছি। কখন জানি আমাকেও খেয়ে ফেলে ওই বদমাশ পাখিটা।
মাছ রাঙা বলল, ‘ঠিক আছে, তোমাকে বিশ্বাস করলাম। এবার বল কি বলতে চাও?’
চিল বলর, ‘দেখো বাজপাখিটা খুব বড়। ওর গায়ে শক্তিও অনেক বেশি। ওর সঙ্গে শক্তিতে পারবো না আমরা। কিন্তু বুদ্ধিতে তো পারবো। একটা কথা তো আমরা সবাই জানি, গায়ের শক্তির চেয়ে বুদ্ধির শক্তি অনেক বেশি।’
সবাই চিলের কথায় সায় দিলো। কিন্তু বুদ্ধিটা কী? কীভাবে বাজপাখিটাকে খতম করা যায়? চিন্তা করতে লাগলো সবাই।
চিল বলল, ‘একটা জাল তৈরি করতে হবে। আর সে জালটা ওই কড়ই গাছটার ওপর পেতে রাখতে হবে। বাজপাখি ফিরে এসে যখনই ওই গাছে বসবে আমরা জালের রশি ছেড়ে দেবো। জালে জড়িয়ে গেলো ওকে সবাই মিলে একসঙ্গে আক্রমণ করে মেলে ফেলবো।’
সবাই হাততালি দিয়ে উঠলো। বাহবা দিলো চিলকে।
ময়না বলল, জাল তৈরি করবে কে?’
বাবুই বলল, ‘আরে দূর এটা একটা কাজ হলো! সুতা এনে দাও। একদিনের মধ্যে আমি জাল তৈরি করে দেবে।’
পাতিকাক বলল, ‘আজকের মধ্যেই তোমাকে সুতা এনে দিচ্ছি। কালকের মধ্যে তুমি জাল তৈরি করতে পারবো তো?’
বাবুই বলল, ‘পারবো। পারতেই হবে।’
আর দেরি নয়। সবাই কাজে লেগে গেলো। কাক তাঁতি বাড়ি থেকে সুতা নিয়ে এলো। অনেকগুলো বাবুই মিলে একদিনের মধ্যে বিরাট একটি জাল তৈরি করে ফেললো। তারপর হাজার হাজার পাখি সেই জালটাকে কড়ই গাছের মাথায় পেতে রাখলো।
জাল পাতা হলে সবই খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়ে বাজপাখির ফিরে আসার অপেক্ষা করতে থাকলো।
চারদিন পর ক্লান্ত বাজপাখি যেই কড়ই গাছের ডালে বসেছে অমনি সবাই জালের রশি ছেড়ে দিলো। জাল পড়লো বাজপাখির মাথায়। মুহূর্তে জালে জড়িয়ে গেলো বাজপাখিটা।
বাজপাখি অনেক আকুতি-মিনতি করলো। সারস বলল, ‘দুষ্টু পাখির মিষ্টি কথায় ভুলতে নেই। এসো সবাই মিলে একে খতম করে দেই।’
সারস পাখির কথা শেষ না হতেই সবাই ঝাঁপিয়ে পড়লো বাজপাখিটার ওপর। কয়েক মিনিটের মধ্যেই বাজপাখিটি মারা গেলে সবই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। বনে আবার শান্তি ফিরে এলো।
2. রাখাল ও জাদুর আম গাছ
এক গরিব রাখাল ছেলে। মাকে নিয়ে তার ছোট সংসার। সে খুবই সরল ও সৎ। সে মাঠে মাঠে গরু চরায়। তার নিজের কোনো গরু নেই। অন্যের গরু নিয়ে সারাদিন মাঠে থাকে।
বিকেল হলে ঘরে ফিরে। মা যা দেয় তাই খেয়ে নেয়। কোনো কথা বলে না। বায়না ধরে না। খেয়ে দেয়ে চুপচাপ বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে থাকে।
একদিন রাখালের মা বলল, ‘বাবা, আর কত দিন অন্যের গরু চরাবি? এবার নিজে একটা গরু কিন।’
মায়ের কথা শুনে রাখাল ছেলে খুব খুশি হয়। খুুশি হয়ে রাখাল তার মাকে বলল, ‘বেশ, তুমি যখন গরু কিনতে বলেছ- আমাকে গরু কিনতেই হবে।’ ছেলের কথায় মা-ও খুশি হল।
পরের দিন মাঠের পাশে এক আম গাছের নিচে গিয়ে বসল রাখাল। বসে কী করে একটা গরু কেনা যায় তা ভাবল। তখনি আম গাছ থেকে একটা আম পড়ল। রাখাল আমটা কুড়াল। ওর ভিষণ ক্ষুধা পেয়েছিল। তাই আমটা খেতে চাইল।
রাখাল মুখের কাছে তুলে ধরল আমটা। আমটায় কামড় বসাল। আমটা ছিল খুব টক। তাই এক কামড় খেয়েই রাখাল আমটা ফেলে দিল।
এই দেখে আম গাছটা কষ্ট পেল। বলল, ‘রাখাল আমার আমটা ফেলিস না। খেয়ে নে।’
আম গাছের কথায় রাখাল ফের আমটা হাতে নিল।
রাখাল বলল, ‘তোমার আম খুব টক। খাওয়া যায় না।’
আম গাছ বলল, ‘তা আমি জানি। তুই আমার আমটা খা। তোকে অনেক হীরে দেব, মুক্তা দেব।’
আম গাছের কথা রাখালের বিশ্বাস হল। সে টক আমটা খেল। খেয়ে বলল, ‘এবার আমাকে হীরে দাও, মুক্তা দাও।’
আম গাছ বলল, ‘আমার ডানপাশটায় মাটি খুঁড়ে দেখ। সাতটা সোনার কলস দেখতে পাবি। কলসগুলো হীরে-মুক্তোয় ভরা।’
রাখাল ছেলে আম গাছের ডানে খুঁড়ল। খুঁড়ে সত্যি সত্যি বড় বড় সাতটি কলস পেল। সবগুলো তুলে আনল। রাখাল দেখল সত্যি সত্যি কলসগুলো হীরে-মুক্তোয় ভরা। কলসগুলো পেয়ে রাখাল খুব খুশি হল।
আম গাছ বলল, ‘এবার শোন আমার আম কেন টক। মিষ্টি হলে সবাই এসে আমার আম খেত। হাতের লাঠি দিয়ে মাটিতে খোঁচা দিত। এক সময় হয়ত হীরার খোঁজ পেয়ে যেত। আমি চাইনি এসব অসৎ লোকদের হাতে যাক।
এসব হীরে-মুক্তো ওরা হিসেব করে খরচ করত না। তুই সহজ-সরল মানুষ। তুই অন্যের গরু চরিয়ে দিন কাটাস। তোর দুঃখ আমাকে কষ্ট দেয়। তাই তোকেই হীরে-মুক্তো দিয়ে দিলাম।’
তুই এসব বাড়িতে নিয়ে যা। ধীরে ধীরে বেচে টাকা জমাবি। তোর মতো অসহায় গরিবদের সাহায্য করবি। অন্যের টাকার লোভ করবি না। কাউকে ঠকাবি না।
তুই সৎ মানুষ। এগুলো সৎ মানুষের পুরস্কার। রাখাল ছেলে সাত কলস হীরে-মুক্তো নিয়ে বাড়ি গেল। আম গাছের কথা মতো কাজ করল।
মাকে নিয়ে সুখে তার দিন কাটতে লাগল।
3. রাজার দুধের পুকুর
একদা এক রাজা তার লোকদের একটি দিঘি খনন করতে বলল। দিঘীটা খনন করা হলে রাজা ঘোষনা করে দিল রাজ্যের প্রতিটি ঘর থেকে এক গ্লাস করে দুধ নিয়ে আসতে হবে। আর রাতে তা দিঘীতে দিতে হবে। সকালে রাজা দেখতে চায় তার দিঘী দুধ দিয়ে পূর্ণ হয়েছে। রাজার এ আদেশ শুনে প্রত্যেকে নিজ নিজ ঘরে ফিরে এল।
এক লোক রাতে রাজার পুকুরে দুধ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এমন সময় তার মাথায় এক চিন্তা এল। সে ভাবল। যেহেতু সবাই রাজার পুকুরে এক গ্লাস করে দুধ দিবে। আমি যদি দুধের পরিবর্তে এক গ্লাস পানি দিই তাহলে কেউ এটা ধরতে পারবে না। কারণ সবাই গভীর রাতে দুধ দেবে। রাতের অন্ধকারে আমি কি দিচ্ছি তা কেউ বুঝতে পারবে না । সবাই মনে করবে আমি দুধই দিচ্ছি। এই চিন্তা করে লোকটি মনে মনে ভাবল আমি দুধের পরিবর্তে পানিই দেব।
রাতে সে তাড়াতাড়ি গিয়ে এক গ্লাস পানি রাজার পুকুরে দিয়ে আসলো।
পরদিন রাজা তার দুধের পুকুর দেখতে এল। একি পুকুর পানিতে ভর্তি।দুধের কোন চিহ্ন এখানে দেখা যাচ্ছে না।রাজার পুকুর পানিতে পূর্ণ।
আসলে প্রতিটি লোকই ভেবেছিল অন্য একজনে দুধ দেবে তাই আমি পানি দিই। এভাবেই রাজার পুকুর পানিতে পূর্ণ হয়ে গেল।
4. দুধ পিঠার গাছ
গল্পটা সত্যিই অদ্ভুত। শীতের এক সকালে শ্রাবন দাদুর কাছ থেকে গল্পটা শুনেছিল। দাদু সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে বেড়াতে এসেছে। দুধ পীঠার গাছ নিয়ে এক মজার গল্প। শ্রাবনের সাথে তার বোন শ্রাবন্তীও যোগ দিল। গল্পটা এ রকম-"গ্রামের এক রাখাল পিঠা খাচ্ছিল।-------
হঠাৎ সে কি মনে করে একটা পিঠা মাটিতে লাগিয়ে দিল। প্রতিদিন সে এক গ্লাস দুধ ঢেলে দেয় সেখানে। সাতদিন পরে রাখাল দেখল, হঠাত করে সেখানে একটা পিঠার গাছ হয়েছে। আস্তে আস্তে পিঠার গাছ বড় হয়। রাখাল পিঠার গাছে উঠে পিঠা খায়। আর পাড়ার বন্ধুদের বিলিয়ে দেয়। রাখালের আনন্দ আর ধরে না। পিঠা খেয়ে খেয়ে রাখালের সময় ভালই চলছিল। হঠাত একদিন এক দাইনী বুড়ি এল। সে রাখালের কাছে একটা পিঠার আবদার করল। কিন্তু রাখাল তাকে কোন পিঠা দিলনা। সেই রাগে ডাইনী বুড়ি মন্ত্র পড়ে রাখালকে ভেড়া বানিয়ে ফেলল। গল্পটা শুনতে বেশ মজাই পেল শ্রাবন আর শ্রাবন্তী। তবে গল্পটা শ্রাবনের কাছে আজগুবী মনে হল। কিন্তু ছোট বোন শ্রাবন্তীর গল্পটা মনে ধরেছে।
একদিন শ্রাবন্তী বাড়ির পেছনে টবে পিঠে লাগিয়ে দিল। রোজ সকাল বিকেল শ্রাবন্তী গাছের টবে কিছু দুধ আর পানি দেয়। দুদিন পর চারা গজাল। শ্রাবন্তী ভাবল গল্পের সেই দুধ- পিঠের গাছ। গাছ দেখে সে কী খুশি!
শ্রাবন পিঠে লাগালে গাছ হয় এ গল্পটা বিশ্বাস করে নাই। কিন্তু তার চোখের সামনেই হন হন করে একটা গাছ বড় হচ্ছে। কী মারাত্মক! সে ভেবেই পাচ্ছিল না, এটা কই করে সম্ভব। গাছ বড় হতে দেখে শ্রাবন্তী দারুন খুশী। সে দাঁত উল্টিয়ে শ্রাবন ভাইয়াকে বলল, ‘পিঠা যখন ধরবে তখন দেখবি, আমি আর দাদু খাব। তোকে দেব না।’
শ্রাবন খিল খিল করে হাসে। বলে, "তারপর একদিন ডায়নি বুড়ি আসবে। তোকেও ভেড়া বালিয়ে ভেলবে"
শ্রাবন ভাইয়ার কথা কেড়ে নিয়ে শ্রাবন্তী বলে "গল্পের রাখালটা বোকা ছিল। ডায়নি বুড়িকে পিঠা খেতে দেয়নি।। তাই ডাইনি বুড়ি ওকে ভেড়া বানিয়ে দেয়। কিন্তু আমি ডাইনি বুড়িকে পিঠা খেতে দেব।’
শ্রাবন চুপ করে শোনে। তার বিশ্বাসে ফাটল ধরে। পিঠা লাগালে গাছ হয়। এটা তার মনে একটু একটু গেথে যায়।
শ্রাবন্তী আরো বলল, ‘ডাইনি বুড়িকে আমি বাসায় নিয়ে যাব। ওকে গেমস খেলতে দেব। ও খুশি হবে। তারপর আমরা ভাব জমিয়ে রাক্ষসপুরীতে যাব।
অনেক হীরে-জহরত আনব। আর আনব ডানাকাটা একটা লালপরী আর একটা নীল পরী।’সাথে ‘একটা জাদুর বাক্সও আনব। তখন আমি সবাইকে মজার মজার যাদু দেখাব ।
শ্রাবনের মন খারাপ হয়ে যায়। ভাবে সেও কেন শ্রাবন্তীর সঙ্গে থাকল না। পিঠার গাছ নিয়ে একটা স্বপ্নের মধ্যে শ্রাবন্তীর সময় পার হতে লাগল। পিঠের গাছটা বেশ বড় হয়েছে। প্রায় তিনফুট। কেমন প্যাচাঁনো গাছটা। দূর থেকে দেখলে সাপ মনে হয়।
সময় বয়ে যায় শ্রাবন্তীর দুধ-পিঠের গাছে আর পিঠে হয়না। শ্রাবন্তীর মনটা খারাপ হয়ে যায়। প্রায়ই বারান্দায় বসে গাছটার দিকে তাকিয়ে থাকে। শ্রাবন্তীর মনের এই অবস্থা দেখে বাসার সবাই চিন্তিত হয়ে পড়ে। বৃদ্ধ দাদুর মনে মনে অনুশোচনা হয়।
এক বিকেলে শ্রাবন্তীর পাশে গিয়ে বসে আদর করে বলে শ্রাবন্তীকে বলে এটা নিছক একটা গল্প। রুপকথার গল্প। রুপকথার গল্প কখনও বাস্তবে হয় না। পিঠে কখনও গাছে ধরে না। এটা রান্না ঘরে তৈরী করতে হয়। দাদুর কথা শুনে শ্রাবন্তী গুমড়ে কেদে উঠে।
দাদু আরো বলে পিঠে বানাতে চালের গুড়া, গুড়, তেল আরো অনেক কিছু লাগে। আমি তোমার আব্বুকে বলেছি আজ এ সব নিয়ে আসবে। বউমাকে বলেছি কাল তোমাকে পিঠা বিনিয়ে দেবে।
পরের দিন শ্রাবন্তীদের বাসায় পিঠা বানানোর ধুম পড়ে গেলে। শ্রাবন্তীও মায়ের সাথে পিঠা বানানোর কাজে মাকে সাহায্য করছে। বিকেলে শ্রাবন্তী তার বন্ধুদের দাওয়াত করেছে। এ যেন এক মহা উৎসব। বিকেলে বন্ধুদের সাথে পিঠা খেতে খেতে আনন্দে মেতে উঠল।
5. চুড়ামনির মাথার খুলি
এক দেশে ছিল এক গুরু ।শিষ্য বাড়ি যাবে বলে একদিন প্রস্তুত হচ্ছিলেন তিনি ।ঠিক এসময় চুড়ামনি নামে এক ছেলে এসে গুরু পা ধরে বসে পড়ল ।
আর বলতে লাগলঃ গুরু ! আমারে তোমার শিষ্য করে নাও ।
গুরু বললেনঃ ঠিক আছে ।চল আরেক শিষ্য বাড়ি ।আহার করে আসি ।
গুরু শিষ্য দুজনে হেটে রওয়ানা হলেন ।সারাদিন হেটে ক্লান্ত হয়ে গুরু বললেনঃ বাবা চুড়ামনি ,আমি এই বটগাছে নিচে একটু বসি ।তুমি ঐ যে ময়দানের ঐ পাড়ের বাজার থেকে চিড়া মুড়ি কিছু নিয়ে আস ।
চুড়ামনি বললঃ ঠিক আছে ।
বাজারে কাছাকাছি একটা তেমাথা রাস্তা ।ঐ রাস্তার মাঝে একটা মরা খুলি দেখে চুড়ামনি চমকে উঠল ।
আয় গন্ডায় লাথ্থি মারে
যায় গন্ডায় লাত্থি মারে !
এই কান্ড দেখে চুড়ামনি গেল চিড়ামুড়ির কথা ভুলে ।এক দৌড়ে এসে গুরু পায়ের কাছে চলে এলো হাপাতে হাপাতে ।
গুরু বললঃ কিরে বাবা চুড়ামনি ,চিড়ামুড়ি কই ?
চিড়ামনি হাপাতে হাপাতে খুলিটির কথা গুরুকে খোলে বলল ।
শুনে গুরু বললঃ ও এই কথা ! তবে শোন সে কাহিনী ।
এক দেশে ছিল এক রাজা ।লোক লস্কর ,ধন দৌলতের তার অভাব ছিল না ।
তার ছিল একটি মাত্র ছেলে ।ছেলেকে পড়ানোর জন্য রাজা এক পন্ডিত রেখে দিলেন ।ছেলে পন্ডিতের কাছে যায় – আসে ।এইভাবে কয়েকদিন কেটে গেল ।একদিন পন্ডিত সাহেব কথায় কথায় বললেনঃ আল্লায় যারে দিছে বিদ্যা ,তার বিদ্যা দিমু কিদ্দা ?
এই কথায় রাজকুমার শুনে গেলেন হড়কে । লেখাপড়া দিল ছেড়ে ।
সকলে কতযে চেষ্টা করল কিন্তু তার এক কথা ‘বিদ্যা পামু আল্লারথন’ ।
শুনে রাজা গেলেন রেগে ।সেই দেশেরই এক সওদাগর ছিল ।সে আজ তার জাহাজ ভাসাবে ।তাই আসল রাজার অনুমতি নিতে ।
রাজা ভাবলেন এই মোক্ষম সময় ।
এ কুলাঙ্গার মুর্খ ছেলে রেখ বদনাম করে লাভ নাই ।
সওদাগরকে হুকুম দিয়ে বললেনঃ এই মুর্খরে তোমার লগে নিয়া যাও ।
সমুদ্রে বাক্সবন্দি করে ফেলে দিও ।
এরপর রাজার ছেলেকে নিয়ে সওদাগড় জাহাজ ছেড়ে দিল ।
এইদিকে রাণী খবর পেয়ে তো কেঁদে হয়রান ।
পশু কাঁদে পাখি কাঁদে
কাঁদে গাঙের ঢেউ
রাজারকুমার যায়রে মরে
রুখলনা রে কেউ !
একদিন দুইদিন করে কেটে যায় সাতদিন ।জাহাজ তখন সমুদ্রের মাঝে ।রাজকুমারকে ঘুমন্ত অবস্থায় সওদাগর দিল তাকে সমুদ্রে ফেলে ।
পানিতে পড়েই রাজকুমারের ঘুম গেল ছুটে ।
প্রানপনে চেষ্টা করতে লাগল ভেসে থাকার ।
জাহাজ পেরিয়ে যায় ,দুর দুরান্তে ।
রাজকুমার প্রায় অবশ ।ঠিক সেইসময় গেলে ঐ সাগরে চর জেগে ।
আর তাতে ঠাঁই নিয়ে রাজকুমার পেলেন রক্ষা ।
দয়ার সাগর দয়াল আল্লা
এই অকুল সায়রে
কেরামতে চর জাগাইয়া
বাচাইলা আমারে ।
রাজকুমার চরে খাদ্যের খোঁজে লেগে গেলে ।দেখতে দেখতে সুর্য ডুবে দেখা দিল চাঁদ ।এমন সময় রাজকুমার দেখতে পেলেন চরের ঠিক মাঝখানে একটা অদ্ভুত গাছে ।
সেইগাছের ঝাকরা পাতার নিচে সেই গাছের ফল গেয়ে রাজকুমার বসলেন বিশ্রাম নিতে ।
তখন রাত দুই প্রহর ।কি জানি কথার আওয়াজে রাজকুমারের ঘুম গেলে ভেঙ্গে ।
চমকে উঠে দেখেন গাছের মধ্যে দুটো পাখি ।একটা নামঃ শুক আর একটার নাম সারী ।
সারী বলছেঃ শুক এই বিজন চরে মানুষ আসল কিভাবে ?
শুক বলছেঃ শুন সারী ।বিস্তারিত বলছি তোমায় ।এই হচ্ছে এক রাজকুমার ।ভাগ্যের ফেরে আল্লার উছিলায় ও নিয়েছে ইচ্ছায় বনবাস ।তবে ও ছেলে যদি আল্লার নাম নিয়া এই গাছের পাতা ভক্ষন করে তবে খুব শীঘ্রই সে এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে ।
তবে ..
সারী বললঃ তবে কি ?
শুক বললঃ তবে ভাগ্য গননা যদি ভুল না হয় রাজকুমারের আরেকটা ফারা আছে ।সেটা আমার জানা নাই ।
এই কথা বলে পাখি দুটো গাছে থেকে উড়ে চলে গেল ।রাজকুমারও বিশ্বাসী মনে গাছের পাতা খেতে শুরু করর ।
আল্লারে ডাকিয়া ছাওয়াল
কিনা কাম করে
উত্তরের পাতারে খাইল
রাত দুইফর ধরে ।।
তিন পহরের কালে ছাওয়াল
কি কাম করিল
পশ্চিমের ডালের পাতা
ছিড়িয়া খাইল
প্রভাবের শুকতারা
যখনে উঠিল
দক্ষিনের পাতারে ছাওয়াল
খেয়ে শেষ করিল
কালি আন্ধার গিয়া যখন
দল পহর আসিল
আল্লারে ভাবিয়া ছাওয়াল
পুবের পাতা খাইল ।।
রাত যখন শেষ ,তখন গাছের পাতাও শেষ ,রাজকুমারের ক্ষুদা তৃষ্ণা ,ক্লান্তিও শেষ ।
সেখান থেকে এসে দেখে এক অবাক কান্ড ।
মাঠের মাঝে একটা বাড়ি ।
সোনালী সে বাড়ি খালি
ঝিকিমিকি করে
রাজকুমারে এসে সেথায়
আস্তানা গাড়ে ।
রাজকুমার সোনার ঘরে থাকে ,আল্লার উপাসনা করে আর সায়রের দিকে তাকিয়ে নানা কথা ভাবে ।
এইভাবে দিন ।সপ্তাহ পেরিয়ে মাস আসে ।
হঠাত্ একদিন রাজকুমার দেখে নদীতে এক ভেলা ।
ভেলার মসারী টেনে দেখেঃ
সোনার বরণ কন্যা ওরে
মশারীর ভেতরে
রাহুতে গিড়িল যে চাঁন
পালায় মেঘের আড়ে ।
সাপের ছোবল দাগ কন্যার
পায়ে বিধে আছে
চিঠি একখানে পাশে পড়ে
রাজকুমারী আছে ।
রাজকুমার লেগে গেলেন সেবার ।কাসবন , রোদ্দর পেরিয়ে আসে বর্ষার ঢালি ।
রাজকুমার আর রাজকুমারী দিব্বি আছে এখন ।
একদিন ।
সেই যে সওদাগর গিয়েছিল বানিজ্যে ।সে ফিরছিল এ পথে ।এসে দেখে অবাক কান্ড ।সমুদ্রের মাঝে এক চর আর তাতে এক অপরুপ নারী ।রাজকুমারকে দেখে সে গেল আরও চমকে ।
জাহাজ ভারে সওদাগর নামলেন চরে ।তাকে দেখে রাজকুমার এলো ছুটে ।
ঠিক হল সোনার ঘরটার বিনিময়ে সওদাগর তাদের দেশে ফিরিয়ে দিবে ।
কিন্তু সওদাগরের মনে জাগল বদ মতলব ।
গভির রাতে রাজকুমার আর রাজকুমারী যখন ঘুমে বিভোর তখন সে কি করল ,রাজকুমারকে বেঁধে দিল সমুদ্রে ফেলে ।
ঘুমের মধ্যে রাজকুমার
পড়িল সায়রে
কান্দিত লাগিল মুখে
আল্লা আল্লা করে ।
জাহাজের মধ্যে রাজকুমারীর ঘুম ভাঙতেই সেও শুরু করল কান্না ।
সে কান্নায় এলো ঝড় ।তছনছ অবস্থা ।
এদিকে রাজপুত্র একটা কাঠ পেয়ে তাতে ঝাপটে ধরে ভেসে রইল ।
ওদিকে রাজকুমারীও জাহাজের একটা খোল ধরে ভেসে রইল ।
ধলপ্রহরের সময় তাদের হল দেখা ।
আর এদিকে সদাগর ঝাপটে ঝাপটে একটা চরে উঠতেই ধরল তাকে বাঘে ।সবখেয়ে মাথাটা রেখে চলে গেল সে ।
আর কোন এক বনিক সে চরে নেমে মাথাটাকে নিয়ে এলো এই বাজারে ।
সেই থেকে এই মাথার খুলি
আইতে খায় লাত্থি
যাইতে খায় লাত্থি
2. রাখাল ও জাদুর আম গাছ
এক গরিব রাখাল ছেলে। মাকে নিয়ে তার ছোট সংসার। সে খুবই সরল ও সৎ। সে মাঠে মাঠে গরু চরায়। তার নিজের কোনো গরু নেই। অন্যের গরু নিয়ে সারাদিন মাঠে থাকে।
বিকেল হলে ঘরে ফিরে। মা যা দেয় তাই খেয়ে নেয়। কোনো কথা বলে না। বায়না ধরে না। খেয়ে দেয়ে চুপচাপ বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে থাকে।
একদিন রাখালের মা বলল, ‘বাবা, আর কত দিন অন্যের গরু চরাবি? এবার নিজে একটা গরু কিন।’
মায়ের কথা শুনে রাখাল ছেলে খুব খুশি হয়। খুুশি হয়ে রাখাল তার মাকে বলল, ‘বেশ, তুমি যখন গরু কিনতে বলেছ- আমাকে গরু কিনতেই হবে।’ ছেলের কথায় মা-ও খুশি হল।
পরের দিন মাঠের পাশে এক আম গাছের নিচে গিয়ে বসল রাখাল। বসে কী করে একটা গরু কেনা যায় তা ভাবল। তখনি আম গাছ থেকে একটা আম পড়ল। রাখাল আমটা কুড়াল। ওর ভিষণ ক্ষুধা পেয়েছিল। তাই আমটা খেতে চাইল।
রাখাল মুখের কাছে তুলে ধরল আমটা। আমটায় কামড় বসাল। আমটা ছিল খুব টক। তাই এক কামড় খেয়েই রাখাল আমটা ফেলে দিল।
এই দেখে আম গাছটা কষ্ট পেল। বলল, ‘রাখাল আমার আমটা ফেলিস না। খেয়ে নে।’
আম গাছের কথায় রাখাল ফের আমটা হাতে নিল।
রাখাল বলল, ‘তোমার আম খুব টক। খাওয়া যায় না।’
আম গাছ বলল, ‘তা আমি জানি। তুই আমার আমটা খা। তোকে অনেক হীরে দেব, মুক্তা দেব।’
আম গাছের কথা রাখালের বিশ্বাস হল। সে টক আমটা খেল। খেয়ে বলল, ‘এবার আমাকে হীরে দাও, মুক্তা দাও।’
আম গাছ বলল, ‘আমার ডানপাশটায় মাটি খুঁড়ে দেখ। সাতটা সোনার কলস দেখতে পাবি। কলসগুলো হীরে-মুক্তোয় ভরা।’
রাখাল ছেলে আম গাছের ডানে খুঁড়ল। খুঁড়ে সত্যি সত্যি বড় বড় সাতটি কলস পেল। সবগুলো তুলে আনল। রাখাল দেখল সত্যি সত্যি কলসগুলো হীরে-মুক্তোয় ভরা। কলসগুলো পেয়ে রাখাল খুব খুশি হল।
আম গাছ বলল, ‘এবার শোন আমার আম কেন টক। মিষ্টি হলে সবাই এসে আমার আম খেত। হাতের লাঠি দিয়ে মাটিতে খোঁচা দিত। এক সময় হয়ত হীরার খোঁজ পেয়ে যেত। আমি চাইনি এসব অসৎ লোকদের হাতে যাক।
এসব হীরে-মুক্তো ওরা হিসেব করে খরচ করত না। তুই সহজ-সরল মানুষ। তুই অন্যের গরু চরিয়ে দিন কাটাস। তোর দুঃখ আমাকে কষ্ট দেয়। তাই তোকেই হীরে-মুক্তো দিয়ে দিলাম।’
তুই এসব বাড়িতে নিয়ে যা। ধীরে ধীরে বেচে টাকা জমাবি। তোর মতো অসহায় গরিবদের সাহায্য করবি। অন্যের টাকার লোভ করবি না। কাউকে ঠকাবি না।
তুই সৎ মানুষ। এগুলো সৎ মানুষের পুরস্কার। রাখাল ছেলে সাত কলস হীরে-মুক্তো নিয়ে বাড়ি গেল। আম গাছের কথা মতো কাজ করল।
মাকে নিয়ে সুখে তার দিন কাটতে লাগল।
3. রাজার দুধের পুকুর
একদা এক রাজা তার লোকদের একটি দিঘি খনন করতে বলল। দিঘীটা খনন করা হলে রাজা ঘোষনা করে দিল রাজ্যের প্রতিটি ঘর থেকে এক গ্লাস করে দুধ নিয়ে আসতে হবে। আর রাতে তা দিঘীতে দিতে হবে। সকালে রাজা দেখতে চায় তার দিঘী দুধ দিয়ে পূর্ণ হয়েছে। রাজার এ আদেশ শুনে প্রত্যেকে নিজ নিজ ঘরে ফিরে এল।
এক লোক রাতে রাজার পুকুরে দুধ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এমন সময় তার মাথায় এক চিন্তা এল। সে ভাবল। যেহেতু সবাই রাজার পুকুরে এক গ্লাস করে দুধ দিবে। আমি যদি দুধের পরিবর্তে এক গ্লাস পানি দিই তাহলে কেউ এটা ধরতে পারবে না। কারণ সবাই গভীর রাতে দুধ দেবে। রাতের অন্ধকারে আমি কি দিচ্ছি তা কেউ বুঝতে পারবে না । সবাই মনে করবে আমি দুধই দিচ্ছি। এই চিন্তা করে লোকটি মনে মনে ভাবল আমি দুধের পরিবর্তে পানিই দেব।
রাতে সে তাড়াতাড়ি গিয়ে এক গ্লাস পানি রাজার পুকুরে দিয়ে আসলো।
পরদিন রাজা তার দুধের পুকুর দেখতে এল। একি পুকুর পানিতে ভর্তি।দুধের কোন চিহ্ন এখানে দেখা যাচ্ছে না।রাজার পুকুর পানিতে পূর্ণ।
আসলে প্রতিটি লোকই ভেবেছিল অন্য একজনে দুধ দেবে তাই আমি পানি দিই। এভাবেই রাজার পুকুর পানিতে পূর্ণ হয়ে গেল।
4. দুধ পিঠার গাছ
গল্পটা সত্যিই অদ্ভুত। শীতের এক সকালে শ্রাবন দাদুর কাছ থেকে গল্পটা শুনেছিল। দাদু সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে বেড়াতে এসেছে। দুধ পীঠার গাছ নিয়ে এক মজার গল্প। শ্রাবনের সাথে তার বোন শ্রাবন্তীও যোগ দিল। গল্পটা এ রকম-"গ্রামের এক রাখাল পিঠা খাচ্ছিল।-------
হঠাৎ সে কি মনে করে একটা পিঠা মাটিতে লাগিয়ে দিল। প্রতিদিন সে এক গ্লাস দুধ ঢেলে দেয় সেখানে। সাতদিন পরে রাখাল দেখল, হঠাত করে সেখানে একটা পিঠার গাছ হয়েছে। আস্তে আস্তে পিঠার গাছ বড় হয়। রাখাল পিঠার গাছে উঠে পিঠা খায়। আর পাড়ার বন্ধুদের বিলিয়ে দেয়। রাখালের আনন্দ আর ধরে না। পিঠা খেয়ে খেয়ে রাখালের সময় ভালই চলছিল। হঠাত একদিন এক দাইনী বুড়ি এল। সে রাখালের কাছে একটা পিঠার আবদার করল। কিন্তু রাখাল তাকে কোন পিঠা দিলনা। সেই রাগে ডাইনী বুড়ি মন্ত্র পড়ে রাখালকে ভেড়া বানিয়ে ফেলল। গল্পটা শুনতে বেশ মজাই পেল শ্রাবন আর শ্রাবন্তী। তবে গল্পটা শ্রাবনের কাছে আজগুবী মনে হল। কিন্তু ছোট বোন শ্রাবন্তীর গল্পটা মনে ধরেছে।
একদিন শ্রাবন্তী বাড়ির পেছনে টবে পিঠে লাগিয়ে দিল। রোজ সকাল বিকেল শ্রাবন্তী গাছের টবে কিছু দুধ আর পানি দেয়। দুদিন পর চারা গজাল। শ্রাবন্তী ভাবল গল্পের সেই দুধ- পিঠের গাছ। গাছ দেখে সে কী খুশি!
শ্রাবন পিঠে লাগালে গাছ হয় এ গল্পটা বিশ্বাস করে নাই। কিন্তু তার চোখের সামনেই হন হন করে একটা গাছ বড় হচ্ছে। কী মারাত্মক! সে ভেবেই পাচ্ছিল না, এটা কই করে সম্ভব। গাছ বড় হতে দেখে শ্রাবন্তী দারুন খুশী। সে দাঁত উল্টিয়ে শ্রাবন ভাইয়াকে বলল, ‘পিঠা যখন ধরবে তখন দেখবি, আমি আর দাদু খাব। তোকে দেব না।’
শ্রাবন খিল খিল করে হাসে। বলে, "তারপর একদিন ডায়নি বুড়ি আসবে। তোকেও ভেড়া বালিয়ে ভেলবে"
শ্রাবন ভাইয়ার কথা কেড়ে নিয়ে শ্রাবন্তী বলে "গল্পের রাখালটা বোকা ছিল। ডায়নি বুড়িকে পিঠা খেতে দেয়নি।। তাই ডাইনি বুড়ি ওকে ভেড়া বানিয়ে দেয়। কিন্তু আমি ডাইনি বুড়িকে পিঠা খেতে দেব।’
শ্রাবন চুপ করে শোনে। তার বিশ্বাসে ফাটল ধরে। পিঠা লাগালে গাছ হয়। এটা তার মনে একটু একটু গেথে যায়।
শ্রাবন্তী আরো বলল, ‘ডাইনি বুড়িকে আমি বাসায় নিয়ে যাব। ওকে গেমস খেলতে দেব। ও খুশি হবে। তারপর আমরা ভাব জমিয়ে রাক্ষসপুরীতে যাব।
অনেক হীরে-জহরত আনব। আর আনব ডানাকাটা একটা লালপরী আর একটা নীল পরী।’সাথে ‘একটা জাদুর বাক্সও আনব। তখন আমি সবাইকে মজার মজার যাদু দেখাব ।
শ্রাবনের মন খারাপ হয়ে যায়। ভাবে সেও কেন শ্রাবন্তীর সঙ্গে থাকল না। পিঠার গাছ নিয়ে একটা স্বপ্নের মধ্যে শ্রাবন্তীর সময় পার হতে লাগল। পিঠের গাছটা বেশ বড় হয়েছে। প্রায় তিনফুট। কেমন প্যাচাঁনো গাছটা। দূর থেকে দেখলে সাপ মনে হয়।
সময় বয়ে যায় শ্রাবন্তীর দুধ-পিঠের গাছে আর পিঠে হয়না। শ্রাবন্তীর মনটা খারাপ হয়ে যায়। প্রায়ই বারান্দায় বসে গাছটার দিকে তাকিয়ে থাকে। শ্রাবন্তীর মনের এই অবস্থা দেখে বাসার সবাই চিন্তিত হয়ে পড়ে। বৃদ্ধ দাদুর মনে মনে অনুশোচনা হয়।
এক বিকেলে শ্রাবন্তীর পাশে গিয়ে বসে আদর করে বলে শ্রাবন্তীকে বলে এটা নিছক একটা গল্প। রুপকথার গল্প। রুপকথার গল্প কখনও বাস্তবে হয় না। পিঠে কখনও গাছে ধরে না। এটা রান্না ঘরে তৈরী করতে হয়। দাদুর কথা শুনে শ্রাবন্তী গুমড়ে কেদে উঠে।
দাদু আরো বলে পিঠে বানাতে চালের গুড়া, গুড়, তেল আরো অনেক কিছু লাগে। আমি তোমার আব্বুকে বলেছি আজ এ সব নিয়ে আসবে। বউমাকে বলেছি কাল তোমাকে পিঠা বিনিয়ে দেবে।
পরের দিন শ্রাবন্তীদের বাসায় পিঠা বানানোর ধুম পড়ে গেলে। শ্রাবন্তীও মায়ের সাথে পিঠা বানানোর কাজে মাকে সাহায্য করছে। বিকেলে শ্রাবন্তী তার বন্ধুদের দাওয়াত করেছে। এ যেন এক মহা উৎসব। বিকেলে বন্ধুদের সাথে পিঠা খেতে খেতে আনন্দে মেতে উঠল।
5. চুড়ামনির মাথার খুলি
এক দেশে ছিল এক গুরু ।শিষ্য বাড়ি যাবে বলে একদিন প্রস্তুত হচ্ছিলেন তিনি ।ঠিক এসময় চুড়ামনি নামে এক ছেলে এসে গুরু পা ধরে বসে পড়ল ।
আর বলতে লাগলঃ গুরু ! আমারে তোমার শিষ্য করে নাও ।
গুরু বললেনঃ ঠিক আছে ।চল আরেক শিষ্য বাড়ি ।আহার করে আসি ।
গুরু শিষ্য দুজনে হেটে রওয়ানা হলেন ।সারাদিন হেটে ক্লান্ত হয়ে গুরু বললেনঃ বাবা চুড়ামনি ,আমি এই বটগাছে নিচে একটু বসি ।তুমি ঐ যে ময়দানের ঐ পাড়ের বাজার থেকে চিড়া মুড়ি কিছু নিয়ে আস ।
চুড়ামনি বললঃ ঠিক আছে ।
বাজারে কাছাকাছি একটা তেমাথা রাস্তা ।ঐ রাস্তার মাঝে একটা মরা খুলি দেখে চুড়ামনি চমকে উঠল ।
আয় গন্ডায় লাথ্থি মারে
যায় গন্ডায় লাত্থি মারে !
এই কান্ড দেখে চুড়ামনি গেল চিড়ামুড়ির কথা ভুলে ।এক দৌড়ে এসে গুরু পায়ের কাছে চলে এলো হাপাতে হাপাতে ।
গুরু বললঃ কিরে বাবা চুড়ামনি ,চিড়ামুড়ি কই ?
চিড়ামনি হাপাতে হাপাতে খুলিটির কথা গুরুকে খোলে বলল ।
শুনে গুরু বললঃ ও এই কথা ! তবে শোন সে কাহিনী ।
এক দেশে ছিল এক রাজা ।লোক লস্কর ,ধন দৌলতের তার অভাব ছিল না ।
তার ছিল একটি মাত্র ছেলে ।ছেলেকে পড়ানোর জন্য রাজা এক পন্ডিত রেখে দিলেন ।ছেলে পন্ডিতের কাছে যায় – আসে ।এইভাবে কয়েকদিন কেটে গেল ।একদিন পন্ডিত সাহেব কথায় কথায় বললেনঃ আল্লায় যারে দিছে বিদ্যা ,তার বিদ্যা দিমু কিদ্দা ?
এই কথায় রাজকুমার শুনে গেলেন হড়কে । লেখাপড়া দিল ছেড়ে ।
সকলে কতযে চেষ্টা করল কিন্তু তার এক কথা ‘বিদ্যা পামু আল্লারথন’ ।
শুনে রাজা গেলেন রেগে ।সেই দেশেরই এক সওদাগর ছিল ।সে আজ তার জাহাজ ভাসাবে ।তাই আসল রাজার অনুমতি নিতে ।
রাজা ভাবলেন এই মোক্ষম সময় ।
এ কুলাঙ্গার মুর্খ ছেলে রেখ বদনাম করে লাভ নাই ।
সওদাগরকে হুকুম দিয়ে বললেনঃ এই মুর্খরে তোমার লগে নিয়া যাও ।
সমুদ্রে বাক্সবন্দি করে ফেলে দিও ।
এরপর রাজার ছেলেকে নিয়ে সওদাগড় জাহাজ ছেড়ে দিল ।
এইদিকে রাণী খবর পেয়ে তো কেঁদে হয়রান ।
পশু কাঁদে পাখি কাঁদে
কাঁদে গাঙের ঢেউ
রাজারকুমার যায়রে মরে
রুখলনা রে কেউ !
একদিন দুইদিন করে কেটে যায় সাতদিন ।জাহাজ তখন সমুদ্রের মাঝে ।রাজকুমারকে ঘুমন্ত অবস্থায় সওদাগর দিল তাকে সমুদ্রে ফেলে ।
পানিতে পড়েই রাজকুমারের ঘুম গেল ছুটে ।
প্রানপনে চেষ্টা করতে লাগল ভেসে থাকার ।
জাহাজ পেরিয়ে যায় ,দুর দুরান্তে ।
রাজকুমার প্রায় অবশ ।ঠিক সেইসময় গেলে ঐ সাগরে চর জেগে ।
আর তাতে ঠাঁই নিয়ে রাজকুমার পেলেন রক্ষা ।
দয়ার সাগর দয়াল আল্লা
এই অকুল সায়রে
কেরামতে চর জাগাইয়া
বাচাইলা আমারে ।
রাজকুমার চরে খাদ্যের খোঁজে লেগে গেলে ।দেখতে দেখতে সুর্য ডুবে দেখা দিল চাঁদ ।এমন সময় রাজকুমার দেখতে পেলেন চরের ঠিক মাঝখানে একটা অদ্ভুত গাছে ।
সেইগাছের ঝাকরা পাতার নিচে সেই গাছের ফল গেয়ে রাজকুমার বসলেন বিশ্রাম নিতে ।
তখন রাত দুই প্রহর ।কি জানি কথার আওয়াজে রাজকুমারের ঘুম গেলে ভেঙ্গে ।
চমকে উঠে দেখেন গাছের মধ্যে দুটো পাখি ।একটা নামঃ শুক আর একটার নাম সারী ।
সারী বলছেঃ শুক এই বিজন চরে মানুষ আসল কিভাবে ?
শুক বলছেঃ শুন সারী ।বিস্তারিত বলছি তোমায় ।এই হচ্ছে এক রাজকুমার ।ভাগ্যের ফেরে আল্লার উছিলায় ও নিয়েছে ইচ্ছায় বনবাস ।তবে ও ছেলে যদি আল্লার নাম নিয়া এই গাছের পাতা ভক্ষন করে তবে খুব শীঘ্রই সে এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাবে ।
তবে ..
সারী বললঃ তবে কি ?
শুক বললঃ তবে ভাগ্য গননা যদি ভুল না হয় রাজকুমারের আরেকটা ফারা আছে ।সেটা আমার জানা নাই ।
এই কথা বলে পাখি দুটো গাছে থেকে উড়ে চলে গেল ।রাজকুমারও বিশ্বাসী মনে গাছের পাতা খেতে শুরু করর ।
আল্লারে ডাকিয়া ছাওয়াল
কিনা কাম করে
উত্তরের পাতারে খাইল
রাত দুইফর ধরে ।।
তিন পহরের কালে ছাওয়াল
কি কাম করিল
পশ্চিমের ডালের পাতা
ছিড়িয়া খাইল
প্রভাবের শুকতারা
যখনে উঠিল
দক্ষিনের পাতারে ছাওয়াল
খেয়ে শেষ করিল
কালি আন্ধার গিয়া যখন
দল পহর আসিল
আল্লারে ভাবিয়া ছাওয়াল
পুবের পাতা খাইল ।।
রাত যখন শেষ ,তখন গাছের পাতাও শেষ ,রাজকুমারের ক্ষুদা তৃষ্ণা ,ক্লান্তিও শেষ ।
সেখান থেকে এসে দেখে এক অবাক কান্ড ।
মাঠের মাঝে একটা বাড়ি ।
সোনালী সে বাড়ি খালি
ঝিকিমিকি করে
রাজকুমারে এসে সেথায়
আস্তানা গাড়ে ।
রাজকুমার সোনার ঘরে থাকে ,আল্লার উপাসনা করে আর সায়রের দিকে তাকিয়ে নানা কথা ভাবে ।
এইভাবে দিন ।সপ্তাহ পেরিয়ে মাস আসে ।
হঠাত্ একদিন রাজকুমার দেখে নদীতে এক ভেলা ।
ভেলার মসারী টেনে দেখেঃ
সোনার বরণ কন্যা ওরে
মশারীর ভেতরে
রাহুতে গিড়িল যে চাঁন
পালায় মেঘের আড়ে ।
সাপের ছোবল দাগ কন্যার
পায়ে বিধে আছে
চিঠি একখানে পাশে পড়ে
রাজকুমারী আছে ।
রাজকুমার লেগে গেলেন সেবার ।কাসবন , রোদ্দর পেরিয়ে আসে বর্ষার ঢালি ।
রাজকুমার আর রাজকুমারী দিব্বি আছে এখন ।
একদিন ।
সেই যে সওদাগর গিয়েছিল বানিজ্যে ।সে ফিরছিল এ পথে ।এসে দেখে অবাক কান্ড ।সমুদ্রের মাঝে এক চর আর তাতে এক অপরুপ নারী ।রাজকুমারকে দেখে সে গেল আরও চমকে ।
জাহাজ ভারে সওদাগর নামলেন চরে ।তাকে দেখে রাজকুমার এলো ছুটে ।
ঠিক হল সোনার ঘরটার বিনিময়ে সওদাগর তাদের দেশে ফিরিয়ে দিবে ।
কিন্তু সওদাগরের মনে জাগল বদ মতলব ।
গভির রাতে রাজকুমার আর রাজকুমারী যখন ঘুমে বিভোর তখন সে কি করল ,রাজকুমারকে বেঁধে দিল সমুদ্রে ফেলে ।
ঘুমের মধ্যে রাজকুমার
পড়িল সায়রে
কান্দিত লাগিল মুখে
আল্লা আল্লা করে ।
জাহাজের মধ্যে রাজকুমারীর ঘুম ভাঙতেই সেও শুরু করল কান্না ।
সে কান্নায় এলো ঝড় ।তছনছ অবস্থা ।
এদিকে রাজপুত্র একটা কাঠ পেয়ে তাতে ঝাপটে ধরে ভেসে রইল ।
ওদিকে রাজকুমারীও জাহাজের একটা খোল ধরে ভেসে রইল ।
ধলপ্রহরের সময় তাদের হল দেখা ।
আর এদিকে সদাগর ঝাপটে ঝাপটে একটা চরে উঠতেই ধরল তাকে বাঘে ।সবখেয়ে মাথাটা রেখে চলে গেল সে ।
আর কোন এক বনিক সে চরে নেমে মাথাটাকে নিয়ে এলো এই বাজারে ।
সেই থেকে এই মাথার খুলি
আইতে খায় লাত্থি
যাইতে খায় লাত্থি
New 5 Short Story for Kids
0 Comments