Best of Short Story With Moral 

This is a Blog about Short Story for Kids. Where I Share Best Short Story, Moral Story in Bengali

1. বুদ্ধিমান ব্যবসায়ী

এক ধনী ব্যবসায়ী ছিল। তার ছিল প্রচুর ধন সম্পত্তি। আর ছিল অনেক লোকজন, ঝি-চাকর গাড়িঘোড়া ইত্যাদি। তার একটা বড়ো কুকুরও ছিল। কুকুরটা ছিল খুবই প্রভুভক্ত। সে মনিবের সব লোকজনদের পাহারা দিত। কেউ কাজে ফাঁকি দিলে, জিনিসপত্র ভেঙে ফেললে বা চুরি করলে ঘেউঘেউ করে ডেকে মনিবকে জানিয়ে দিত। আর কুকুরটার প্রধান কাজ ছিল খুব ভোরে মোরগ ডেকে ওঠবার সঙ্গে সঙ্গে সকলকে জাগিয়ে দেওয়া। ফলে লোকজনদের আর বেশিক্ষণ ঘুমিয়ে থাকা চলত না। উঠে পড়তে হত সকাল না হতেই। আর উঠেই মনিবের কাজে লেগে যেতে হত।
এত সকালে উঠে- শীত নেই, বর্ষা নেই কাজ করা।
ব্যবসায়ীটির লোকলস্করদের আর সইছিল না। তারা মতলব আঁটছিল যে কীভাবে কুকুরটাকে জব্দ করা যায়! অনেক ভেবেচিন্তে শেষে তারা কুকুরটার খাবারে একদিন বিষ মিশিয়ে মেরে ফেলল। তারা ভাবল - এবার বাঁচা গেল, রাত ভোর হবার আগে আর তাদের উঠতে হবে না। কিন্তু এতে ফল হল উল্টো। মনিব বেজায় রেগে গেলেন। তিনি ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন। তারপর একটা ব্যবস্তা নিলেন। রাত দ্বিপ্রহর থেকেই তিনি তার লোকজনদের উঠিয়ে কাজে লাগিয়ে দিতেন। মিষ্টি করে, মুখে বলতেন - ওরে তোরা উঠে পড়, রাত আর নেই। অনেক কাজ আছে, সব পরে আছে।

(Moral) নীতিঃ মানুষের দুর্গতির জন্যে মানুষই দায়ী।

2. তিন বোকার গল্প 

এক গ্রামে ছিল তিন বোকা। তারা বোকা বলে বোকা, একেবারে বোকার হদ্দ। তাদের বাড়ির লোকজন একদিন তিনজঙ্কেই একসাথে গ্রাম থেকে বের করে দিল। বেচরা বোকা তিনজন গ্রামের বাইরে এসে একটা বড় ছাতিম তগাছের ছায়ায় এসে বসল। তারপর তিনজন মিলে ঠিক করল তারা দূর দেশে চলে যাবে।

সেইমত তিন বোকা নদী-নালা-মাঠ পেরিয়ে নতুন এক গ্রামে গিয়ে হাজির হল। নতুন গ্রামে এসে তারা একটি বেশ বড় সড় বাড়ি দেখতে পেল। তিন বোকা খোঁজ নিয়ে জানতে পারল সেটা এক মাষ্টারমশাইয়ের বাড়ি। মাষ্টারমশাই ঠিক তখনই স্কুল যাবার জন্য তৈরি হয়ে বেরোতে যাচ্ছিলেন। এমনসময় তিন বোকা তাঁর পায়ে পড়ে পা চেপে ধরল। মাষ্টারমশাই বললেন, ওরে ছাড় ছাড়, স্কুলের দেরি হয়ে যাচ্ছে। বোকা তিনজন তবু পা ছাড়ে না। বলল, মাষ্টারমশাই আমরা ভিন-গাঁ থেকে এসেছি। আমাদের আপনি একটা ব্যবস্থা করে দিন।

মাষ্টারমশাই বললেন, আচ্ছা আচ্ছা। সব ব্যবস্থা ফিরে এসে হবে। বাড়িতে মা রয়েছে। তোরা তার কাছ থেকে খাবার চেয়ে খেয়ে নিবি। তারপর বাড়িএ কিছু কাজকর্ম সেরে রাখবি। আমি ফিরে এসে তোদের ব্যবস্থা করব। এই বলে তিনি স্কুলের প্পথে হন্ হন্ করে হাঁটতে লাগলেন।

বোকা তিনজন বুড়িমায়ের কাছে পান্তা ভাত মুড়ি কাঁচা লঙ্কা মেখে পেট ভরে খেয়ে নিল। তারপর বলল, বলুন বুড়িমা কি কাজ করতে হবে? বূড়িমা বলল, যা তোরা নদীতে স্নান সেরে ঘানি থেকে তিন হাঁড়ি সরষের তেল নিয়ে আয়।


বোকারা সেইমত নদীতে স্নান সেরে তেল আনতে চলল। মাটির ছোট ছোট হাঁড়িতে তেল নিয়ে তারা বাড়ির পথে ফিরছে এমন সময় পথে দেখল একটা প্রকান্ড বট গাছ। সেই বট গাছের ছায়ায় বসে একটু জিরিয়ে নিতে তারা তেলের হাঁড়িগুলো মাটিতে রাখল। তারপর জিরিয়ে টিরিয়ে যেই হাঁড়িগুলোর দিকে তাকিয়েছে অমনি দেখে তিনটি হাঁড়িতেই চোর ঢুকে বসে আছে। আসলে হাঁড়ির মধ্যে ছিল তেল আর ঐ তেলেই তারা নিজেদের ছায়া দেখতে পেয়েছে। নিজেদের ছায়াগুলোকে চোর ভেবে তারা দুম দাম করে লাঠি দিয়ে পিটাতে লাগল। লাঠির ঘায়ে মাটির হাঁড়িতো ভাঙ্গলই সাথে সাথে তেলটাও গড়িয়ে পড়ল। অবশেষে তিন বোকা খালি হাতে বাড়ি ফিরে এল।

মাষ্টারমশাই সন্ধ্যেবেলায় বাড়িতে ফিরে সব কথা শুনে বলল, কাল তোরা তিনজন বনে গিয়ে তিন বোঝা শুকনো কাঠ নিয়ে আসবি, এটা পারবি তো ? বোকারা অনেকখানি ঘাড় কাত করে খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়ল।

পরদিন মাষ্টারমশাই স্কুলে চলে গেলে বোকা তিনজনও বনের পথ ধরল। তারপর তিনজন তিনটি বেশ বড়সড় কাঠের বোঝা মাথায় চাপিয়ে বুড়িমার কাছে ফিরে এল। বুড়িমা তখন খোলা পাতে মুড়ি ভাজছিল। গরমে তার মেজাজ ছিল সপ্তমে। আর ঠিক তখনই বোকা তিনজন চিৎকার জুড়ে দিল, কাঠ এনেছি, রাখবো কোথায় ? তিন বোকা একই কাথা বলায় বুড়িমা রেগে-মেগে বলল, কাঠ রাখার জায়গা পাচ্ছিস না ? আমার মাথায় রাখ। এই কথা শেষ হতেই বোকা তিনজন তিনবোঝা কাঠ বুড়িমার মাথায় ফেলে দিল আর তাতেই বুড়ি মারা গেল।

মাষ্টারমশাই ঘরে ফিরে দেখল অনর্থ হয়ে গেছে। কেন যে তিনি বোকাদের আশ্রয় দিলেন ? তারপর কান্না-কাটি থামিয়ে বোকাদের নির্দেশ দিলেন, যা তোরা মা-কে নিয়ে গিয়ে নদীতে সৎকার করে ফেল। এতে যদি তোদের কিছুটা পাপ কমে।


বোকারা তখন একটা তালপাতার চাটায়ের মধ্যে বুড়িমার দেহটা গুটিয়ে নদীতে নিয়ে চলল। যেতে যেতে কোনসময় বুড়ির দেহটা চাটাই থেকে বাইরে পড়ে গেছে তারা খেয়ালই করে নি। নদীতে পৌঁছে দেখল বুড়িমা নেই। কোথায় গেল ? বোকা তিনজন তখন ভাবল, বুড়িমা নিশ্চয়ই জ্যান্ত হয়ে কোথাও লুকিয়ে পড়ছে। তাই তারা বুড়িকে ধরে নিয়ে আসতে আবার গ্রামের পথে পা বাড়াল।

যেতে যেতে তারা অন্য একটি গ্রামে গিয়ে পৌঁছল। সেই গ্রামে একটি বুড়ি ঝাট দিয়ে উঠোন পরিষ্কার করছিল। বোকা তিনজন তাকে দেখতে পেয়ে হৈ হৈ করে এল। তারপর তাকে জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে সৎকার করে দিল।

সন্ধ্যায় বোকারা মাষ্টারমশাইয়ের কাছে এসে বলল, আজ আমাদের খুব পরিশ্রম গেছে। বুড়িমা তালপাতার চাটাই থেকে বেরিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। আমরা তাকে জোর করে ধরে নিয়ে এসে সৎকার করে দিয়েছি।

মাষ্টারমশাই বোকাদের কথা শুনে তো একেবারে হাঁ হয়ে গেলেন। অনেক হয়েছে। এরা শুধু বোকা নয়, একেবারে বোকার হদ্দ। এদের কিছুইতেই ঘরে রাখা যাবে না। রাখলেই পদে পদে বিপদ। এই ভেবে তিনি তাদের তাড়িয়ে দিলেন।

তিন বোকা আবার ভিন-গাঁয়ের পথে হাঁটতে লাগল।

3. সল্প সুখের গল্প 

এক বাগানে একটি গোলাপ গাছ ছিল। সেই গোলাপ গাছটির পাশেই ছিল একটি অমরত্ব গাছ। দুজনেই পাশাপাশি বেড়ে উঠেছিল। আর দুজনের মধ্যে ভীষণ বন্ধুত্ব।
একদিন অমরত্ব গাছটি গোলাপকে ডেকে বলল, ‘ভাই গোলাপ, তুমি কি সুন্দরই না দেখতে, আর তোমার সুগন্ধে মনটা ভরে যায় আমার। তুমি মানুষ ও দেবতা সকলেরই প্রিয়। তোমাকে আমি অভিনন্দন জানাই।‘
গোলাপ তখন মৃদু হেসে বলল, ‘তুমি ঠিকই বলেছ। তবে, আমার এই জীবন অতি ক্ষণস্তায়ি। আর গাছ থেকে আমায় কেউ না ছিঁড়লেও আমি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বিবর্ণ হয়ে শুকিয়ে যাই, অথচ তুমি কেবলই বিকশিত হও; তুমি এখনও যেমন, পরেও ঠিক তেমনই থাকো। আমার মনে হয় স্বল্পকাল বিলাসসুখ ভোগ করে মৃত্যুর কবলে পড়ার চেয়ে অতি অল্পে সন্তুষ্ট থেকে দীর্ঘকাল শান্তিতে বেঁচে থাকা অনেক ভালো।‘

(Moral) নীতিঃ স্বল্প সুখের চেয়ে সুদীর্ঘ শান্তির জীবন অনেক ভালো।

4. মা-কাঁকড়ার উপদেশ 


জলার ধারে এক কাঁকড়া তার পরিবার নিয়ে বসবাস করত। মা-কাঁকড়ার অনেকগুলো বাচ্চা ছিল। বাচ্চারা জলার ধারে সারাদিন খেলা করে বেড়াত। তারপর সন্ধে হলে তারা ঘরে ফিরে আসত। মা-কাঁকড়া তার বাচ্চাদের সবসময় নানারকম উপদেশ দিত। কি করে ভালো হয়ে চলতে হয়, কি করে বড়ো হতে হয়, কি করে ভালো হওয়া যায়- এইসব পইপই করে মা-কাঁকড়া তার বাচ্চাদের শেখাত। বাচ্চারাও মা-কাঁকড়ার কথামতো চলত।
একদিন মা-কাঁকড়া তার ছেলেকে বলল, ‘শোন, একটা কথা বলি- কখনও পিছনের দিকে হাঁটবি না। আর কখনও ভিজে পাথরের গায়ে গা ঘষবি না। বুঝলি?
ছেলেটি বলল, ‘বুঝেছি মা। তবে তুমি নিজে একবার সামনে হেঁটে দেখাও না মা, তাই দেখে আমি আমি সামনের দিকে হাঁটা শিখব।‘
কাঁকড়া-মা ছেলের এই বুদ্ধির প্রকাশ দেখে মনে মনে তারিফ করল। আর মনে মনে ভাবল ছেলে তো বেশ বুদ্ধিমান হয়ে উঠেছে।

(Moral) নিতিঃ উপদেশের চেয়ে দৃষ্টান্ত অনেক বেশি শিক্ষাপ্রদ।


5. একটি ষাঁড় ও একটি ব্যাং

জলার ধারে এক ব্যাং তার পরিবার নিয়ে বাস করত। সেই ব্যাঙের অনেকগুলো বাচ্চা ছিল। একদিন একটি ব্যাঙের বাচ্চা জলার পাশে স্যাঁতস্যাঁতে মাঠে ঘুরছিল। সেই মাঠে তখন একটি ষাঁড় চরছিল। বিশাল ষাঁড়টাকে দেখে বাচ্চা ব্যাঙটি প্রথমটায় একটু হকচকিয়ে গিয়েছিল। পরে সাহস করে দূর থেকে তাকে ভালো করে দেখতে লাগল। আর যতই তাকে দেখতে লাগল ততই সে অবাক হয়ে যেতে লাগল। তারপর এক সময় সে ঘরে ফিরে এল।
ফিরে এসে ব্যাঙের বাচ্চাটি তার মাকে বলল মা, মা, আজকে মাঠে আমি একটা বিরাট জানোয়ার দেখে এলাম। সে যে কত বড়ো আর মোটা তা না দেখলে তুমি বুঝতে পারবে না।
ব্যাং বাচ্চাটির মা তখন একটু অহংকারের স্বরে বলল- অ্যাঁ, কি বললি? - সে আমার চেয়েও বড়ো দেখতে?
বাচ্চাটি হাসতে হাসতে বলল- তুমি কি বলছ, মা। তোমার চেয়ে সেই জানোয়ারটা অনেক অনেক গুণ বড়ো।
মা- ব্যাঙটি তখন তার পেটটা ফুলিয়ে বলল, 'এই এত বড়ো?'
বাচ্চা ব্যাঙটি হা হা করে হেসে বলল- তুমি তার একশো ভাগ এর এক ভাগও না। মা- ব্যাঙটি তখন তার পেটটা আরও ফুলিয়ে বলল- এবার! বাচ্চা ব্যাঙটি তখন হাসতে হাসতে বলল- 'মা, তুমি হাজার ছেস্তা করলেও তার মত বড়ো হতে পারবে না।
ব্যাং- বাচ্চাটির এই কথা শুনে মা- ব্যাং রেগেমেগে তার পেটটা আরও বড়ো করে ফুলাতে লাগল আর ওমনি ফটাস করে ফেটে গেল তার পেটটা। মা- ব্যাঙটি মারা গেল।

(Moral) নিতিঃ অহংকার করা কোনও সময়ই উচিত নয়।